চিকিৎসককে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন আফগানিস্তানে চরম অপুষ্টির শিকার এক মা তার বুকে সন্তানকে খাওয়ানোর মতো দুধ নেই বলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় তাকে ও তার সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য
তিলে তিলে মরার চেয়ে সন্তানসহ একবারেই মরে যেতে চেয়েছিলেন ওই মা। আফগানিস্তানে চরম অপুষ্টির শিকার এক মা তার বুকে সন্তানকে খাওয়ানোর মতো দুধ নেই বলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় তাকে ও তার সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য চিকিৎসককে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এই মায়ের মতো হাসপাতালটিতে আরও অনেক মা রয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের একটি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ নুরি (ছদ্মনাম) এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুর্বল ওই মায়ের সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
ভিড় এত বেশি যে চিকিৎসকদের হাঁটার মতো জায়গা থাকে না। নুরি বলেন, “হাসপাতালে প্রসব বেদনায় কাতর মায়েদের ভিড় বাড়ছেই। হাসপাতালের পরিবেশও নোংরা। হাসপাতালের কাছের ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বেতন ছাড়া কাজ করতে হয় বলে কয়েক মাস আগে বেশির ভাগ পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।” মায়েদের আর্তনাদের শব্দ এখন হাসপাতালজুড়ে। হাসপাতালের মেঝেটাও রক্তে ভেজা। মায়েদের ওয়ার্ডে এত বেশি রোগী যে অনেক সময় কয়েকজন মায়ের জন্য কেবল একটি বিছানা বরাদ্দ থাকে।
হাসপাতালটি যেন নরকে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “গত সেপ্টেম্বরে মাত্র দুই সপ্তাহে অপুষ্টির কারণে পাঁচ নবজাতক মারা গেছে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের অন্যতম বড় শিশু হাসপাতালে অপুষ্টির শিকার শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। মায়েদের ওয়ার্ডে নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ইনকিউবেটরগুলোতে বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকার কারণে অনেক অপরিণত শিশু মারাও যাচ্ছে। এটা খুব দুঃখের যে আমাদের চোখের সামনে শিশুরা মারা যাচ্ছে। অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে মৃত্যুর ঘটনা বেশি বাড়ছে। তাদের অনেকে আবার খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক সিদ্দিকি জানান, সেপ্টেম্বর মাসে ১০ বছরের নিচের বয়সী চারজন শিশু প্রতি সপ্তাহে অপুষ্টি বা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মারা গেছে। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার ১৫০ শতাংশ বেশি রোগী রয়েছে সেখানে।
অনেক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা অপুষ্টির কারণে বেশি ভুগছে এবং তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এ ধরনের অনেক শিশুকে আমরা ঝরে যেতে দেখছি। ওই চিঠিতে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তহবিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বেতন ছাড়া কাজ করতে কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছে। হেরাত প্রদেশের করোনাভাইরাস হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক রাহমানি তালেবানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আসা একটি চিঠি বিবিসিকে দেন। রোগীদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ছবি বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। চিকিৎসক রাহমানি জানান, তহবিল বরাদ্দ না হওয়ায় আর্থিক সংকটের কারণে তারা হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের এখন কী হবে, তা জানা নেই। তবে বড় দাতা দেশগুলোর আশঙ্কা, তারা যতই সহায়তা পাঠাক না কেন, তার সদ্ব্যবহার তালেবান করতে পারবে না। এর মধ্য থেকে ২৩ হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে মাত্র ৮০ লাখ ডলার বেতন দেওয়া হয়েছে। যেমন গত ১০ নভেম্বর জাতিসংঘ আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য খাতে দেড় কোটি ডলার তহবিল বরাদ্দ দেয়। তালেবানদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসক কালান্দার ইবাদ বলেন, “সহায়তাগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আফগান সরকার কাজ করছে।