আগামী বছর নজরে থাকবে যে ১০ বিষয়


২০২১ সালের করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশায় রয়েছে বিশ্ব। ২০২১ সালকে যদি করোনা মহামারির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বছর বলা যায়, তবে ২০২২ সাল হতে যাচ্ছে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বছর। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে রাজনীতি, কাজের ক্ষেত্র, ভ্রমণ, পর্যটনের মতো বিষয়গুলো বদলে গেছে। এ ছাড়া চীনের উত্থান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও গুরুতর হওয়ার মতো বিষয়গুলো লক্ষ করা গেছে। আগামী বছরে যে ১০টি বিষয় বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে পারে, তার একটি তালিকা করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’।


















১.গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র:


আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস বসবে আগামী বছর। এ বছরই বিশ্বের প্রভাবশালী এই দুই দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হবে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ, টিকাকরণ থেকে মহাকাশ স্টেশন পর্যন্ত সবকিছুতেই দেখা যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্রের পতাকাতলে মুক্ত বিশ্বকে সমাবেশ করার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁর দেশে বিভক্তি এ ক্ষেত্রে একটি দুর্বল বিজ্ঞাপন।


















২.মহামারি থেকে স্থানীয় রোগ: নতুন অ্যান্টিভাইরাল বড়ি, উন্নত অ্যান্টিবডি চিকিৎসা এবং আরও টিকা আসছে। উন্নত বিশ্বের টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য ভাইরাসটি আর প্রাণঘাতী হবে না। তবে এটি এখনো উন্নয়নশীল বিশ্বে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদি টিকাকরণের ক্ষেত্রে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না হয়, তবে কোভিড-১৯ আরও অন্য রোগের মতো স্থানীয় রোগে রূপ নেবে। এটি দরিদ্রদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে, কিন্তু ধনীদের স্পর্শ করতে পারবে না।



















৩.মুদ্রাস্ফীতির উদ্বেগ: সরবরাহ-শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়া এবং শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বলে যে এটি অস্থায়ী, কিন্তু সবাই তাদের বিশ্বাস করে না। ব্রেক্সিট-পরবর্তী শ্রমের ঘাটতি এবং ব্যয়বহুল প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতার কারণে ব্রিটেন স্থবিরতার বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।
















৪.কাজের ভবিষ্যৎ: কাজের ভবিষ্যৎ যে হাইব্রিড মডেলের দিকে যাবে, তা নিয়ে একমত পোষণকারীদের সংখ্যা অনেক। আরও বেশি লোক বাড়ি থেকে কাজ করে আরও দিন কাটাবে। তবে খুঁটিনাটি বিষয়ে মতানৈক্যের অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে কত দিন আর কোনটি? এবং এটা ন্যায্য হবে কি না তা নিয়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অফিসে ফেরার ক্ষেত্রে নারীদের অনীহা বেশি। তাই তাঁদের পদোন্নতির বিষয়টি ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ট্যাক্সবিধি এবং দূরবর্তী কর্মীদের পর্যবেক্ষণ নিয়েও বিতর্ক চলছে।



















৫.ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাড়বে: অন্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকেরা আরও কঠোর নিয়ম করছেন। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল কারেন্সির পথে হাঁটছে। আগামী বছরে আর্থিক ভবিষ্যতের সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই দেখা যাবে। এ লড়াই হবে ক্রিপ্টো ও ব্লকচেইনের সঙ্গে প্রচলিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে


















৬.জলবায়ু সংকট: দাবানল, তাপপ্রবাহ ও বন্যার মতো জলবায়ু সংকট বেড়ে গেলেও তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জরুরি পদক্ষেপের ঘাটতি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গভীর হলেও দুটি দেশের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন। হার্ভাডে সৌর-জিওইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা দলের ওপর নজর রাখতে হবে। আগামী বছর তারা বেলুনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন সরিয়ে ফেলার পরীক্ষা চালাবে।



















৭.ভ্রমণবিভ্রাট: রোনার সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশের সীমান্ত খোলার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশ শূন্য কোভিড নীতি নিয়েছে, তাদের জন্য বিশ্বের রূপান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে ব্যবস্থাপনার একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এদিকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যেসব ভ্রমণ কার্যকলাপ পরিচালিত হতো, তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এটি অবশ্য বিশ্বের জন্য ভালো। কিন্তু এটি ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের জন্য সুখবর নয়।
















৮.মহাকাশজয়ের দৌড়: ২০২২ সাল হবে প্রথম বছর, যখন সরকারি লোকের চেয়ে বেশি পর্যটক পকেটের অর্থ খরচ করে মহাকাশ ভ্রমণে যাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী মহাকাশ পর্যটন সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে পর্যটক টানার ব্যবসা শুরু করবে। চীন তাদের মহাকাশ স্টেশন তৈরির কাজ শেষ করবে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভরশূন্য পরিবেশে শুটিং করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা গ্রহাণুর দিক পরিবর্তন করতে একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে। হলিউড চলচ্চিত্রের মতোই বাস্তবে এ মিশন পরিচালিত হবে।

















৯.রাজনৈতিক ফুটবল: এর পাশাপাশি বড় খেলার আয়োজন প্রায়ই ‘রাজনৈতিক খেলায়’ পরিণত হওয়ার বিষয়টি দেখা যাবে। বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক এবং কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা কীভাবে বিশ্বকে একত্র করতে পারে, তার অনুস্মারক হবে। আয়োজক দেশ নিয়ে সরাসরি প্রতিবাদ ও জাতীয় দলের নাম প্রত্যাহারের ঘটনাও চোখে পড়বে। ২০২১ সালের একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা ছিল, এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনার টিকার দ্রুত বিকাশ। কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা গবেষণার ফলাফল রাতারাতি চোখে পড়ে। আগামী বছরের এ রকম আরও নতুন কিছু প্রযুক্তির ওপর চোখ রাখতে হবে, যা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।


















১০.প্রযুক্তির লাগাম টেনে ধরা: যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিয়ন্ত্রকেরা বছরের পর বছর ধরে প্রযুক্তি জায়ান্টদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো তারা মুনাফার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে দেশটি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তুচ্ছ গেম বা শপিং অ্যাপের বদলে ‘ডিপ টেক’ বা উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করুক। আসন্ন নতুন বছরে মহামারি-পরবর্তী বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাবে। কিন্তু এতে চীনের উদ্ভাবনী শক্তি বাড়বে নাকি তা এ শিল্পের গতি কমিয়ে দেবে?



















আরো দেখুন


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম